অশ্রু ভেজা চোখ

মা আমার মা (মে ২০২১)

মোহাম্মদ তামিম হোসেন
  • 0
  • ৭৬৮
মা পৃথিবীর অমূল্য ধন, যা কখনো ক্রয় করা সম্ভব নয়। আজ আমার গল্প’টি সার্থহীন এক মায়ের অশ্রু ভেজা চোখ।

সে দিন ২৯ শে রমজান পার্কের পাশের রাস্তাটি দিয়েই হেটে যাচ্ছিলাম, বাসার জন্য সামান্য কিছু ফল-ফ্রুইত হাতে ছিলো। পার্কের ইটের টেবিল‘টিতে এক পা উঠিয়ে গাছের সাথে হেলিয়ে বসে চিঠি পড় ছিলো আর চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পানি পরছে। তেমন কিছু বুঝতে পারলাম না মনে মনে ভাবছিলাম হয় তো রিলেশন ম্যটার যেহেতু আজ কালের যুগে রিলেশন করে ছ্যাকা খেয়ে এমন অহরা-অহর দেখা যায়। আমি তার কাছে গেলাম এ ভাবে চিঠি পরে অশ্রু ঝরা বিষয়টা সত্যিই অবাক করা ছিলো তাই জানতে চাইলাম।

“আহাদ” গ্রামের দ্ররিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন, তার বাবা একজন দিন মুজুর, সে নিজ গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে কাজ খুঁজে কাজ করে। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান ”আহাদ” । আহাদ” পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তার বাবা আগের মতোই একদিন কাজের জন্য শহরে জান কিন্তু সে দিনের যাওয়াটা ছিলো একটু অন্য রকম। বাবা সব সময় কাজের জন্য শহরে জান আর পনেরো দিন, এক মাসের ভিতরে ফিরেও আসেন কিন্তু প্রায় দুই মাস, তিন মাস পারিয়ে গেলো কিন্তু বাবার ফিরা হয় না। আমি আর মা খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলাম বাবা না ফেরার কারণে শহরে যাই শহরে অনেক খুঁজা-খুঁজি করি কিন্তু কিছুতেই বাবা সন্ধান মিলেনি। গ্রামের বাড়ি মানুষের বাসায় কাজ করার মতো প্রস্তিথি মায়ের ছিলো না । মানুষের বাড়ি কত দিন খাবার খুজে খাওয়া যায়। ইতি মধ্যে আমার পঞ্চম শ্রেণির রেজাল্ট বের হলো জিপিএ ফাইভ পেলাম মা উৎ কণ্ঠিত হৃদয় নিয়েও খুশি হয়েছেন । আমাদের এবারের যাত্রাটা শহরের পথে ছিলো, শহরে পৌছে একটি বস্তিতে কোন মতে আশ্রয় নিলাম । মা, মানুষের বাসায় কাজ খুঁজে কাজ করতে সুরু করলো আর আমাকেও ষষ্ট শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলো এবং লেখা পড়া খুবই ভালো চলেতে ছিলো। এমন করেই আমাদের দিন কাটছে । আমার জানার মতে মাকে অনেকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব করেছেন কিন্তু মা কি ভাবে রাজি হবে এই কলিজাটাকে রেখে। আমি পড়া লেখা চালিয়ে যেতে থাকি সপ্তম শ্রেণিতে উঠি অনেক চেস্টা করেছিলাম মাকে হেল্প করার জন্য কোন না কোন কাজে জয়েন হতে কিন্তু মা পড়া-লেখা ছাড়া আর আমাকে দিয়ে কিছু করাতে দিবেন না। মা মানুষের বাসায় কাজ করে আবার কখনো কখনো রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বই বা কাচা সবজিও বিক্রি করেছেন। স্কুল থেকে ফেরার পথে দূর থেকে তাকিয়ে দেখতাম মায়ের ঘাম বেয়ে পায়ে টপে টপে পরছে। মায়ের সে করুন অবস্থা দেখে মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতো। অষ্টম শ্রেণিতে গোল্ডেন ফাইভ পেলে মা খুবই খুশি হন। আমাকে এই আনন্দতে জামা, জুতা, পেন্ট কিনে দেন। পাশা-পাশি শহরের বড় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। প্রতিনিয়ত মায়ের মাথার ঘাম পায়ে পরতে দেখেছি, বুকটি তখন ফেটে যেত। মা আমাকে কখনো কিছু বুঝতে দিত না। মা আমাকে এমন ভাবেই স্কুলে পাঠান যে কেউ কখনো বলতে না পারে আমি দ্ররিদ্র মায়ের সন্তান। মায়ের কাছে আমি যেনো আগুনের ভিতরে এক গ্লাস ফ্রিজের ঠান্ডা পানি। মায়ের অতি ভালোবাসায় যেনো আমাকে ভুলিয়েই ফেলেছে আমি দ্ররিদ্র মায়ের সন্তান। কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের সময় গুলো আমি কখনো বুঝতে পারিনি কষ্ট কি। মা আমাকে এত এত ভালোবাসতো যে আমি জানিনা ছোট থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমি কখনো নিজের হাত দিয়ে ভাত খেয়েছি কিনা । অবশেষে একটি এনজিওতে চাকরী সুরু করি। একটি সুন্দর বাসা ভাড়া নেই মা আর আমি ভালোই দিন কাটছিলো । মা একদিন আমাকে বিয়ের কথা বলে আমি বলছি তোমার পছন্দ মতো আমি বিয়ে করবো । মা মেয়ে দেখে আমার পছন্দই মায়ের পছন্দ বিয়েতে আবদ্ধ হই। মা আমি আমার স্ত্রী মিলে ছোট একটি পরিবার ভালোই দিন কাটছে অবশেষে একটি ফুটফুটে সন্তানের বাবাও হই পরিবারকে সব সময় হাসি খুশি রাখতে চেস্টা করতাম। আমার স্ত্রীরির মেজাজটা একটু খিটখিটে ছিলো। বিয়ের বছর খানেক পরে হঠাৎ একদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে দেখি মায়ের সাথে আমার স্ত্রীর তুমুল জগরা অনেক কষ্টে জগরা থামালাম। সাভাবিক ভাবে জীবন চলতে থাকল।
প্রতিনিয়ত কোন না কোন বিষয় নিয়ে মায়ের সাথে জগরা লেগেই থাকতো। সারা দিন অফিস থেকে ফিরে এসে এমন কত দিন আর সর্য্য করা যায় । এভাবে চলতে চলতে আমার মানুষিক অবস্থ্যা খারাপ হতে লাগলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। স্ত্রী পরামর্শ আলাদা একটি বাসা নিতাম কিন্তু কি ভাবে, তাহলে মা থাকবে কোথায়! এই সমস্ত চিন্তা ভাবনাও মাথায় কাজ করে আবার পারছিনা স্ত্রী কে ছাড়তে সাথে আমার ছোট একটি বাচ্চা। প্রতিদিন ই মায়ের চোখের অশ্রু ঝরতে দেখতাম আমার মোট্টেই খারাপ লাগত না, কেন জানি মায়ের কান্নাটাও আমার বিরক্ত লাগত। অবশেষে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, এবং ভেবেছি সেখানে অনেক বুড়-বুড়িরা থাকে তাদের সাথে সময় কাটলে তার ভালো লাগবে সে সেখানে ভালো থাকবে ভেবে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসি । কিন্তু আমি এতটুকো বুঝতে পারিনি যে এত মানুষের সাথে ভালো থাকার চেয়ে সন্তানের কাছে থেকে না খেয়ে সন্তানের মুখ খানি দেখা তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো থাকা। মাকে দিয়ে আসলাম ঘরটি নিলি-ভিলি কোন জগরা বা হৈ-চৈ নেই মনে হচ্ছিলো আমার মাথার উপর থেকে একটি পাহারের বোজা নেমেছে। স্ত্রী, সন্তান আত্নিয়-স্বজন নিয়ে খুশিতেই দিন কাটছিলো। একদিন অফিস থেকে ফিরার পথে খুব গুরুতর এক্সিডেন্ট করি, টানা পাঁচ মাস হাসপাতালে ছিলাম একটি পাঁ বাদ হয়ে যায়। চাকরী থেকে অব্যাহত নিতে হয় অনেক টাকার ব্যয় হয়। এত সুন্দর সাজানো সংসার শেষ হয়ে যায়। আমি এক্সিডেন্ট করার তিন মাস পরে স্ত্রী বাপের বাড়ি টাকা আনতে গিয়ে আর কখনো ফিরে আসেনি। তার খোঁজে গেছিলাম গিয়ে সুনি তার পরিবার তাকে অন্য কোথায়ও বিয়ে দিয়ে দিছে। আমি আজ তার কাছে মূল্যহীন আমার শুধু দোষ একটাই পাঁ হাড়া পঙ্গু চাকরী হারা বাহন। আমার সন্তানটার কথা এতটাই মনে পরছে যে কলিজা ছিরে যাওয়া মতো। ভাই গত কাল খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে শেষ সমাধি করে আসলাম। মা আমাকে এই চিঠি লেখে গেছে।

চিঠি….

বাবা আহাদ, জানস আমি যখন ছোট্ট ছিলাম তোর মতোই আমার বাবা-মা, মারা গেছে। আমরা ছোট দুই ভাই বোন, ভাই আমার একটু বড় ছিলো অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করেছে তেমন পড়া-লেখা করাতে পারেনি শেষে তোর বাবার সাথে বিয়ে হয়েছে কিন্তু তুই যখন একটু বড় হয়েছিস তোর বাবাও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। হয় তো বা সে না ফেরার দেশে চলে গেছে। সে থেকে আমার স্বপ্ন ছিলো শুধু তোকে পড়া-লেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করা । তোকে আমি কখনো কোন কষ্ট বুঝতে দিতে চাইনি। তুই যখন বড় হয়ে বিয়ে করেছিস মনে হয়েছে আমি হালকা হয়েছি। তোদের সাথে আমি সারা জীবন থাকতে চেয়েছি, তোর ছেলেটা ঠিক তোর বাবার চেহারা পেয়েছে। চাইলেই তো জীবনে সব কিছু পাওয়া যায় না’রে বাবা। তুই যখন অফিসে থাকতি আমি তোর বাচ্চাটাকে ধরার মতো অনুমতি পেতাম না। তুই ভাবতি আমি তোর বউর সাথে গাঁ ঠেলে জগরা করি, না আমি তোকে কখনো ভালোবাসতে পারতাম না তোর ভালো চাইতে । কি আমার দোষ ছিলো আমি বুঝে উঠতে পারিনি। যাক তোর সুখের জন্য আমাকে বিদ্ধাশ্রমে দিয়েছিস আমি কোন কষ্ট পাইনি শুধু তোকে একটু দেখতে চাইতাম, তোকে দেখার জন্য কলিজাটা হাহাকার করতো। তুই যদি আমাকে দেখতে একবারের জন্যও আসতি আমার কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে সব কষ্ট ভুলে যেতাম। বাবা আহাদ, আমার নাতি ফাহাদ বুঝি ভালো আছে? বউমাকে দেখতেও ইচ্ছে করে তোকে কি বউমা এখন আর বকে? বউমার খিটখিটে মেজাজটা যদি না থাকতো হয় তো আমার আর তোর কাছ থেকে আসতে হতো না। তোকে তো এখন আর হাত দিয়ে ভাত খাইয়ে দিতে পারি না, বউমাকে বলিস তোকে একটু ভাত খাইয়ে দিত। বাবা আহাদ, হয় তো বা তোর সাথে আর দেখা হবে না। আগামি পরসু ঈদ তোকে না খুবই দেখতে ইচ্ছে করে এই অসুস্থ্য শরীর নিয়ে তো যাইতে পারতাম না, তয় তুই আইছ আমি তো আর তোকে এখন ঈদে কিছু কিনে দিতে পারবো না তুই আমাকে এবারে ঈদে জীবনের শেষ উপহার টুকো দিছ। বাবা তু্ই ছাড়া তো আমার আর এই পৃথিবীতে এই শেষ উপহার দেওয়ার মতো কেউ নেই। বাবা আহাদ, আমার উপরে রাগ রাখিস না, যাইবার কালে একটি কথা কইয়া যাই--- এই বৃদ্ধাশ্রমে তুই কখনো থাকিস না, এখানে যে তোর সন্তান ফাহাদকে তুই কখনো পাশে পাবিনা। বাবা আহাদ” শেষে আমার মতোই শেষ হবে তোর, শেষ দেখা এই বৃদ্ধাশ্রম।

ইতি তোর মা,

আমরা অনেক সময় নিজেকে নিজেই ভুলে যাই,
ভুলে যাই অতীতের ছাতা হয়ে মাথার উপরে থাকা ব্যক্তির কথা,
কিন্তু যা হয় তো বা নতুন প্রজন্ম থেকে কখনো আমরা আশা করি না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মাইদুল সরকার গল্পর থিমটা সুন্দর। শব্দ ও বানানে আরও সতর্ক হতে হবে তামিম ভাই।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মা, এমন একজন ব্যক্তি যার কথা হাজার লেখলেও শেষ হবে না আমাদের মায়ের ভালোবাসা আমরা কখনো বুঝিনা আর বুঝার চেস্টাও করিনা। জীবনে সার্থ ছাড়া একজন মানুষ‘ই সর্বস্থরে পাশে থাকে আর তিনি‘ই হলেন মা। সর্ব শেষ একটি কথাই বলবো,মাকে ভালোবাসেন মাকে পাশে রাখেন ।ধন্যবাদ।

১৭ জানুয়ারী - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী